ছাত্রলীগের রাজনীতির মাশুল: পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নাজমুল

পরিবারসহ আত্মগোপনে,শরণার্থীর জীবনযাপন প্রবাসে

ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে মিরপুর-১ এর বাসিন্দা মোহাম্মদ নাজমুল হোসেনের। একসময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শাহআলী থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সন্ত্রাসী হামলা এবং একের পর এক মিথ্যা মামলার কবলে পড়ে এখন তিনি পরিবারসহ আত্মগোপনে, দেশ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে—প্রক্রিয়াধীন শরণার্থী মর্যাদা পাওয়ার লক্ষ্যে।

নাজমুলের নানি লক্ষী বেগম জানান, ২০১৯ সালে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগ দেন এবং কর্মঠ ও আদর্শবান নেতা হিসেবে সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ২০২২ সালে তিনি শাহআলী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশজুড়ে বিস্তৃত হয়, তখন নাজমুল সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের নামে সহিংসতা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখেন। এতে বিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন তিনি।

৫ আগস্ট, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারত চলে যান। এরপর দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ শুরু হয়। এই সহিংসতার শিকার হন নাজমুল ও তার পরিবারও।

হত্যার হুমকি সম্পর্কে তথ্য পেয়ে ওইদিনই তিনি তার গর্ভবতী স্ত্রী সাদিয়া আক্তার বৃষ্টিকে নিরাপদে শ্বশুরবাড়িতে পাঠান এবং নিজে এক বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নেন। তার নানি ও ছোট ভাইও অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হন।

৬ আগস্ট, সশস্ত্র একদল হামলাকারী নাজমুলের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। লোহার রড, চাকু, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হামলাকারীদের এই হামলায় তার ব্যবসায়িক অংশীদার শুভ্র ঘোষ নিহত হন বলে পরিবারের দাবি। কিন্তু ১৯ আগস্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়।

পরবর্তীতে নাজমুলের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় দুটি ফৌজদারি মামলা। প্রথমটি মিরপুর মডেল থানায় দায়ের করে পুলিশ (মামলা নম্বর ৯৫৬, তারিখ ১৫ আগস্ট ২০২৪), যেখানে ৫৪ জন নামীয় ও ২৫০–৩০০ জন অজ্ঞাতনামাকে অভিযুক্ত করা হয় হত্যাকাণ্ড ও সংঘবদ্ধ সহিংসতায়। দ্বিতীয় মামলা দায়ের করেন শাহআলী থানায় মুফতি আব্দুল হাসান (মামলা নম্বর ৮৫২, তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৪), যেখানে ২২ জন নামীয় ও ১৫–২০ জন অজ্ঞাতনামাকে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা, সন্ত্রাস ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।

পরিবারের দাবি, উভয় মামলাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফসল এবং কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়াই শুধুমাত্র ছাত্রলীগের রাজনীতির কারণে নাজমুলকে টার্গেট করা হয়েছে। তার ওপর পুলিশের পক্ষ থেকেও কোনো সহযোগিতা মেলেনি, বরং নির্যাতন ও গুমের হুমকি এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের কাছ থেকেই।

পরিবারের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় বিএনপি ও জামায়াতের পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি নাজমুলকে সরাসরি হত্যার হুমকি দিয়েছে। এসব হুমকি ও আতঙ্কের মধ্যেই দেশে থাকা সময়গুলো তাকে পার করতে হয়েছে প্রাণভয়ে, প্রতিটি দিন কাটেছে নিরাপত্তাহীনতায়।

নিজ দেশে যখন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন শেষ পর্যন্ত দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন নাজমুল। বর্তমানে তিনি প্রবাসে রয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক শরণার্থী মর্যাদা পাওয়ার জন্য আবেদন প্রক্রিয়ায় রয়েছেন।

আরও পড়ুন: