ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়ায় ইরাকে নিষিদ্ধ সৌদি টিভি চ্যানেল
দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইরত ফিলিস্তিন, লেবানন ও ইরাকের প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়া এবং হামাস ও হিজবুল্লাহর প্রয়াত নেতাদের অসম্মান করায় সৌদি মালিকানাধীন মিডল ইস্ট ব্রডকাস্টিং সেন্টার বা এমবিসি টিভি চ্যানেল নিষিদ্ধ করেছে ইরাক সরকার। এর আগে বাগদাদে চ্যানেলটির অফিসে হামলা চালান বিক্ষুব্ধ ইরাকি তরুণরা।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা পার্সটুডে জানিয়েছে, ইরাকে চ্যানেলটির লাইসেন্স প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং বাগদাদে এর ব্যুরো বা আঞ্চলিক অফিস বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদন মতে, শনিবার (১৯ অক্টোবর) ইরাকের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান কমিউনিকেশনস অ্যান্ড মিডিয়া কমিশনের কর্মকর্তারা সৌদি মালিকানাধীন এমবিসি চ্যানেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বারবার ইরাকি সম্প্রচার বিধিমালার লঙ্ঘন এবং প্রতিরোধ যুদ্ধের বীর নেতা ও শহীদদের সম্মানের ওপর আক্রমণের কারণে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মিডল ইস্ট মনিটরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইরাকের প্রতিরোধ গোষ্ঠীর নেতাদের অপমান করায় এদিন বাগদাদে বিতর্কিত টিভি চ্যানেলটির অফিসে ৪শ’ থেকে ৫শ’ মানুষ হামলা চালায়। এসময় টিভি চ্যানেলটির অফিসে আগুন লাগিয়ে দেন বিক্ষুব্ধরা।
প্রতিবেদন মতে, সৌদি মালিকানাধীন টিভি চ্যানেল মিডল ইস্ট ব্রডকাস্টিং সেন্টার (এমবিসি) সম্প্রতি ‘মিলেনিয়াম অব লিবারেশন ফ্রম টেরোরিস্টস’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে দখলদার ইসরায়েলি হামলায় নিহত হামাসের প্রয়াত নেতা ইসমাইল হানিয়া, সালেহ আল-আরৌরি ও ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করে।
হামাস ছাড়াও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইরাকের সশস্ত্র গোষ্ঠী ইরাকি মোবিলাইজেশন ফোর্সের যোদ্ধাদেরও ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে অভিহিত করে চ্যানেলটি। তবে ওই প্রতিবেদনে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব এবং গাজা ও লেবাননে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে ৪৪ হাজারেরও বেশি নিরীহ মানুষকে মৃত্যু নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
প্রতিবেদনটি সম্প্রচারিত হওয়ার পর এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হয়। হামাসের পক্ষ থেকেও এই প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানান হয়। গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনি জনগণ যখন ইসরায়েলি দখলদারিত্বের হাতে জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার হচ্ছে তখন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলন ও এর নেতাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা উসকে দিচ্ছে এমবিসি চ্যানেল।
এদিকে বিতর্কিত প্রতিবেদনটির প্রতিবাদে রাস্তায় নামে ইরাকি সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সমর্থকরা। সেই প্রতিবাদ বিক্ষোভের এক পর্যায়ে টিভি চ্যানেলটির বাগদাদ অফিসে হামলা চালানো হয়।
ইরাকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে এবং যেসব মানুষ টিভি কার্যালয়ে হামলা চালাতে এসেছিলেন তাদের পুলিশ সরিয়ে দিয়েছে। সে সঙ্গে ইরাকি সম্প্রচার বিধিমালা লঙ্ঘন করায় চ্যানেলটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।