ভারতের পররাষ্ট্রসচিব প্রকাশ করলেন মোদি-ইউনূস বৈঠক কেন হয়নি,
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনকে ঘিরে নিউইয়র্কে সফররত ভারতের ও বাংলাদেশের সরকারের প্রধানদের সম্ভাব্য বৈঠকটি কী কারণে হয়নি এবার তার ব্যাখ্যা দিয়েছে নয়াদিল্লি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুই নেতার বৈঠক না হওয়ার প্রধান কারণ ব্যস্ততম এবং অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত সফরসূচি, যেখানে তারা একই সময় নিউইয়র্কে অবস্থান করেননি।
আরও পড়ুন…মুম্বাই ঘেরাও করতে হাজার হাজার মুসল্লিদের পদযাত্রা, নেপথ্যে?
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনকে ঘিরে বাংলাদেশর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সম্প্রতি জল্পনা চলছিল যে অধিবেশনের ফাঁকে নরেন্দ্র মোদি এবং ড. মুহম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈঠক হতে পারে। তবে গত ১৯ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে বলা হয়, নিউইয়র্কে মোদি এবং ইউনূসের মধ্যে কোনো বৈঠক হচ্ছে না। নয়াদিল্লির এই ঘোষণার পর পরই সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে চাউর হয় যে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকার কারণে ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে চাইছেন না শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সরকার ঘনিষ্ঠ মিত্র নরেন্দ্র মোদি।
তবে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নাকচ করে দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি।তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষ করে আজ মঙ্গলবার ভোরের দিকে নয়াদিল্লির বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে মোদিকে বহনকারী উড়োজাহাজটি। আগের দিন সোমবার তাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি নিউইয়র্কের বিমানবন্দর ছাড়ার কিছুক্ষণ পর নয়াদিল্লিতে এক ব্রিফিংয়ে এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, এবার আমাদের প্রধানমন্ত্রী খুবই সংক্ষিপ্ত সফরে নিউইয়র্কে যান। তার সফরের মেয়াদ ছিল মাত্র ৫৫ ঘণ্টা এবং কয়েক মিনিট আগে তিনি নিউইয়র্ক থেকে নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
‘অন্যদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এখনও নিউইয়র্কে গিয়ে পৌঁছাননি। যেহেতু উভয়ের সফরসূচি ভিন্ন ছিল, তাই এবার তাদের মধ্যে বৈঠকের কোনো সুযোগ ছিল না,’ ব্যাখ্যা করেন তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং আগামী নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের কথা ছিল নরেন্দ্র মোদির। কিন্তু সংক্ষিপ্ত শিডিউল এবং ব্যস্ততার কারণে সেই বৈঠকও বাতিল হয়েছে।
এর আগে, শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হচ্ছে না বলে জানান বাংলাদেশের অন্তর্বতী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ড. ইউনূসের অধিবেশনে যোগ দেয়ার আগেই নরেন্দ্র মোদি নিউইয়র্ক ছাড়বে তাই তাদের দেখা হবে না, বৈঠকও হবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনে দেখা হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, প্রধান উপদেষ্টা যখন যুক্তরাষ্ট্র যাবেন, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেখান থেকে চলে আসবেন।
এদিকে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা ১৬ মিনিটে জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করে।
এর আগে, সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে কাতার এয়ারওয়েজের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন নিরাপত্তা ও গণমাধ্যমকর্মীসহ মোট ৫৭ জন।
সফরকালে নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, নেপাল, ইউরোপীয় কমিশন প্রধান ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নেই।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
কণ্ঠস্বর/রাজিব