দেশের মানুষের ঐক্য বিনষ্ট করার সুযোগ দেয়া যাবে না- গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি
সম্প্রতি সম্মিলিত সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণকে পতাকা অবমাননার মামলায় গ্রেফতার করে যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে তা অবাঞ্ছিত। সরকারের এই অপরিণামদর্শীতার কারণেই অযথা চট্টগ্রামের তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নিহত হতে হল। আমরা সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করার ঘটনায় তীব্র ধিক্কার জানাই এবং সরকারের কাছে দাবী করি অনতিবিলম্বে উপযুক্ত ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আলিফ হত্যায় জড়িতদের বের করে তাদের বিচার নিশ্চিত করা।
আমরা দেখতে পাচ্ছি বেশ কয়েকজনকে ভিডিও দেখে আলিফ হত্যায় জড়িত বলে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন ধরনের অস্বচ্ছতা প্রত্যাশিত নয়। উপযুক্ত তদন্তের আগে আলিফ হত্যা নিয়ে কোন ধরনের মিডিয়া বা ফেসবুক ট্রায়ালেরও আমরা বিরোধিতা করি। আলিফ হত্যার পরে যেভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরী করতে চেয়েছিল দেশী বিদেশী নানান চক্রান্তকারী মহল, সেটি প্রতিহত করতে যেভাবে দেশের সকল পর্যায়ের মানুষ ধর্ম, বর্ণ, দলমত নির্বিশেষে এগিয়ে এসেছেন সেজন্য গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি দেশবাসীকে অভিনন্দন জানায়। বাংলাদেশের জনগণ আবারও কারো ফাঁদে পাড়া না দিয়ে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটা উদাহরণ তৈরি করেছেন।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি মনে করে বাংলাদেশকে এখন যে নানান মাত্রিক দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে তার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন এই বৈচিত্র্যের ঐক্য। দেশের সকল ধর্মের, সকল জাতির, সকল লিঙ্গের, সব ধরনের শ্রেণী পেশা সংস্কৃতির মানুষের মধ্যেকার ঐক্যই পারে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে।
কিন্তু সরকারের কেউ কেউ সহ কয়েকটি মহল এ বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। আর একারণেই আমরা দেখতে পাচ্ছি গণঅভ্যুত্থানের পরে গত তিন মাসে একের পর এক মাজারে হামলা হল, প্রপাগান্ডা বাদ দিলেও হিন্দুদের বাড়িঘরেও হামলা হল, শ্রমিকের উপর গুলি চলল, আদিবাসীদের উপর হামলা হল, রিকশাওয়ালাদেরকে ভিলেন বানানোর চেষ্টা চলল, নারীবিদ্বেষী প্রচার প্রপাগান্ডা চলল, ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী কাজকর্ম চলল, বাজারে সিন্ডিকেটবাজি চলল – কিন্তু এই সবকিছুতেই সরকারের ভূমিকা আশ্চর্যজনকভাবে প্রায় নিষ্ক্রিয় এবং অকার্যকর থাকল।
উপরন্তু যেকোন গণতান্ত্রিক দাবীর আন্দোলনকেই ফ্যাসিবাদের দোসরদের কাজ বলে ট্যাগ দেয়ার চেষ্টা, গণঅভ্যুত্থানকারী শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজনসৃষ্টিকারী বক্তব্য প্রদান বা দায়িত্বজ্ঞানহীন মতামত প্রকাশ, সর্বোপরি পরিস্থিতি সামাল দিতে চরম ব্যর্থতা – এসব কিছুই নানান রকম বিভাজনকে উস্কে দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলছে, যার সুযোগ নেয়ার জন্য পতিত স্বৈরাচার এবং দেশী বিদেশী নানান চক্রান্তকারীরা বসে আছে।
আমরা একারণেই মনে করি, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়াকে বিবেচনায় না নিয়েই পতাকা অবমাননার মতো বিভ্রান্তিমূলক মামলায় চিন্ময়কে গ্রেফতার করাটা সরকারের জন্য সুবিবেচক কোন কাজ হয়নি। আমরা চাই অনতিবিলম্বে চিন্ময়কে জামিন দেয়া হোক। চিন্ময়ের বিরুদ্ধে যদি দেশবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত হওয়ার কোন তথ্যপ্রমাণ সরকারের কাছে থাকে তাহলে সেটা তারা আগে প্রকাশ করুক। আমরা মনে করি, গণঅভ্যুত্থানকে টিকিয়ে রাখতে হলে কোন ধর্মের নামেই কোন প্রকার ফ্যাসিবাদী চর্চাকে প্রশ্রয় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। এদেশের হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কোন ধর্মের সাধারণ দেশপ্রেমিক মানুষই এইসব ধর্মের নামে ফ্যাসিবাদী সংগঠনের তৎপরতাকে সুনজরে দেখেন না।
ফলে আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, আইনজীবী আলিফের হত্যার বিচারের পাশাপাশি গত তিন মাসে ঘটা মাজারে হামলা, হিন্দুদের উপর হামলা, আদিবাসীদের উপর হামলা, শ্রমিকের উপর গুলি চালানো, নারীদের উপর হামলা – এই সকল ঘটনার কঠোর বিচার নিশ্চিত করুন। সকল প্রকার ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ, নারীবিদ্বেষ, জাতিবিদ্বেষ, ঘৃণার চাষের বিরুদ্ধে কঠোর ও কার্যকর অবস্থান নিন।
সংকলিত_এম-আর-আর