অভ্যুত্থানে প্রবাসীদেরও ভূমিকা ছিল : মঈন খান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রবাসী নেতাকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। যেসব নেতাকর্মীকে গায়েবি ও মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছিল তাদের অনেকেই বিদেশে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আজকে দ্বিতীয় স্বাধীন বাংলাদেশে তাদের অনেকেই ফিরে আসছে। তারা কিন্তু লাঠি নিয়ে যুদ্ধ করেননি। তারা রেমিট্যান্স বন্ধের মাধ্যমে যুদ্ধ করেছিলেন।
রোববার (২৪ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি মহিদুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন। মাহিদুর রহমান দীর্ঘ ১৭ বছর পর গত ১৬ নভেম্বর সকালে যুক্তরাজ্য থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। শ্রদ্ধা জানানোর সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন উপস্থিত ছিলেন।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, প্রবাসীদের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া দরকার। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, এ দেশের রিকশাচালক, কৃষক ও শ্রমিক সবাই নতুন করে দ্বিতীয় স্বাধীন দেশে মুক্তভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে মঈন খান বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে ভালো কাজ ও সংস্কার শুরু করেছে এই সরকার। সংস্কার হলো চলমান প্রক্রিয়া। এটা চলতে থাকবে।
ছাত্র-জনতা অন্তর্বর্তী সরকারকে ম্যান্ডেট দিয়ে স্বৈরাচার থেকে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে। এ সরকারকে আমরা সে জন্যই সহায়তা করছি। অহেতুক বিলম্ব করলে হবে না। অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে। কেননা এখানে সবার অধিকার ও স্বাধীনতা জড়িত। বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না।
জনগণ যদি ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দেয় তাহলে মানুষের ও দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাব। তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার আগে তিনি স্বৈরাচার পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা দেন। তিনি নিজে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। তাকে বীর উত্তম খেতাব দেওয়া হয়েছে। আমরা সময়-সুযোগ পেলে শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারতে আসি।
আমরা সবসময় বিশ্বাস করি তিনি সবার মতামতের ভিত্তিতে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা ছিল ঐক্যের মতামত। তিনি সমস্ত জাতির বিভেদ ভুলিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ নামে নতুন একটি ধ্যান-ধারণা দিয়েছিলেন। যার মাধ্যমে দেশের জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে উপজাতি সবাইকে তিনি একটি পরিচয় দিয়েছিলেন। সেটির হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। সেজন্যই আমরা শহীদ জিয়াকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজেদের গৌরবান্বিত করি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ইতিহাস অনেক পুরোনো। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৯০ সালে সামরিক শাসক এরশাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। এই ছাত্র-জনতা ২০১৮ সালে বিদ্রোহ করেছিল। পরবর্তীতে ২০২৪ সালেও তারা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামে। তারা জুলাই-আগস্টে রাজপথে থেকে এ দেশ থেকে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় করেছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ কাপুরুষের মতো দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। অতএব বুঝতে হবে যে, বিএনপি এমন আদর্শের লালন করে যার নাম বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এবং ঐক্যের আদর্শ। আমরা আওয়ামী লীগের মতো লগি-বৈঠার প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। কেননা শহীদ জিয়াউর রহমান বলেছিলেন- ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।’ এ জন্য তিনি নমস্য হয়ে আছেন। বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনে তার চিত্র আঁকা হয়েছিল।