যোগ্য ও ক্লিন ইমেজের নেতৃত্বের খোজে তারেক জিয়া

শিগগির দলের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার নতুন কমিটি দেবে বিএনপি। বিগত কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর এরই মধ্যে বেশ কিছু দিন অতিবাহিত হয়েছে। কাদের নতুন কমিটিতে জায়গা দেওয়া হবে, তা নিয়ে এখন যাচাই-বাছাই চলছে। দল এবং নেতাকর্মীদের কাছে যারা পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি (ক্লিন ইমেজ) হিসেবে পরিচিত, তাদেরই নতুন কমিটিতে প্রাধান্য দেওয়া হবে। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মহানগর উত্তরে এরই মধ্যে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের মধ্য থেকেই নেতৃত্ব আসতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র বলছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে উত্তরে নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। মহানগর উত্তরে নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিএনপিতে নানামুখী তৎপরতা, তদবির, জল্পনা-কল্পনা চলছে। দলের ঢাকা মহানগরকেন্দ্রিক রাজনীতিতে যারা সক্রিয়, তারা নিজ নিজ বলয় থেকে নেতৃত্ব উঠিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তারা। একই সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও তার নিজস্ব চ্যানেলে যোগ্য ও ক্লিন ইমেজের নেতৃত্বের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই, দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়—এমন নেতাদের নেতৃত্বে আনতে কাজ করছেন।

বিএনপির দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা বলেন, তারেক রহমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চান। এ বিষয়টি মাথায় রেখে সম্পূর্ণ ক্লিন ইমেজের নেতাদের দিয়ে মহানগর উত্তর বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করতে চান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগর উত্তরের নতুন কমিটিতে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারমধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন।

অপর‌দি‌কে আলোচনায় থাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন ব‌লেন, দলের প্রয়োজনে হাইকমান্ড যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা সবসময় সততার সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করেছি এবং আজীবন করে যাব। এ ক্ষেত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাকেই স্বাগত জানাব।

তি‌নি আরও ব‌লেন, নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে রয়েছি। সবসময়ই সততার সঙ্গে কাজ করেছি। আগামীতেও আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হলে তা শতভাগ নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে পালন করব। তিনি উত্তরের সাধারণ সম্পাদক পদে নেতৃত্বে আসতে চান।

এদি‌কে, নতুন কমিটি প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যখন উপযুক্ত মনে করবেন, তখনই কমিটি দেবেন।

জানা যায়, মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে বিএনপি। এর আগে গত ৭ জুলাই সাইফুল আলম নিরবকে আহ্বায়ক ও আমিনুল হককে সদস্য সচিব করে দুই সদস্যের এই আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, হাইকমান্ডের কাছে আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে। লিখিত এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই দল ব্যবস্থা নিয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশৃঙ্খলা রোধ এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ গ্রহণ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সারাদেশে দল ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের তিনশর অধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। কয়েকটি জেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটিও বিলুপ্ত করে হাইকমান্ড। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতার মতে, বিশৃঙ্খলা রোধে তারেক রহমানের এমন কঠোর অবস্থান দল ছাড়াও দেশের মানুষের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

সংগঠনকে গতিশীল এবং নেতৃত্বের বিকাশে ২০১৭ সালের এপ্রিলে ঢাকা মহানগর বিএনপিকে দুই ভাগে ভাগ করে কমিটি দেওয়া হয়। উত্তরে এমএ কাইয়ূমকে সভাপতি এবং আহসানউল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপর ২০২১ সালের আগস্টে আমানউল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক ও আমিনুল হককে সদস্য সচিব করে উত্তর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়।

এ ছাড়া সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন, যুবদলের সাবেক সহসভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এমএ কাইয়ূমও। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসান, মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এজিএম শামসুল হক, মোস্তফা জামান, আক্তার হোসেন, সাবেক সদস্য এবিএমএ রাজ্জাকের নামও শোনা যাচ্ছে।

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নেতৃত্বের জন্য অনেক নেতাই আলোচনায় থাকলেও ‘ক্লিন ইমেজের’ ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন সয়ং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই, দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়—এমন নেতাদের নেতৃত্বে আনতে কাজ করছেন দলের হাইকমান্ড।

আরও পড়ুন: