গুম প্রতিরোধে তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন তাসনিম জারা

রাষ্ট্রীয় মদদে গুম ও অপহরণের মতো ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে তিন দফা প্রস্তাব দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আয়োজিত ‘গুমের স্মৃতি’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রদর্শনীর আয়োজন করে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারভিত্তিক সংগঠন ‘মায়ের ডাক’।
- তাসনিম জারার প্রস্তাবগুলো হলো—
গুম প্রতিরোধে স্থায়ী কমিশন গঠন – কমিশনের হাতে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ক্ষমতা থাকতে হবে। এমনকি নিরাপত্তা সংস্থার ডিটেনশন সেন্টার, অফিসিয়াল লগবুক, ফোন ট্র্যাকিং রেকর্ড এবং সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার নথি পর্যালোচনার সুযোগ থাকতে হবে। - আলামত ও নথি সংরক্ষণ – গুমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক প্রমাণ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কীভাবে সেই প্রমাণ ধ্বংস হয়েছে, তার চিহ্ন খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক তদন্ত সহযোগিতা নিতে হবে।
- প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার – বিশেষ করে র্যাব ও ডিজিএফআইসহ যেসব সংস্থার নাম গুমের ঘটনায় এসেছে, সেগুলোর কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। তাদের কর্মকাণ্ডকে সুস্পষ্ট আইনি কাঠামো ও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রীয় মদদে গুমের মতো অপরাধ অনেক বছর ধরে হয়ে আসছে। এখনই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে প্রতিটি ঘটনায় সঠিক তদন্ত ও বিচার হয়। ভবিষ্যতে কোনো নাগরিককে যেন এভাবে ভুগতে না হয়।”
আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে তিনি ভুক্তভোগী পরিবারের উদাহরণ তুলে ধরেন। এর মধ্যে ছিলেন অষ্টম শ্রেণির এক কিশোরী মিম, যার বাবাকে গুম করা হয় যখন সে মাত্র তিন বছরের শিশু। জারা বলেন, “ও বাবার কোনো স্মৃতি জানে না। প্রতিদিন একটি ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। পথে যাকেই দেখে, ভাবে হয়তো সে-ই তার বাবা। এ এক অসহনীয় ট্র্যাজেডি।”
তিনি আরও বলেন, “খুন বা সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় অন্তত পরিবার জানে তাঁদের স্বজন মারা গেছে। কিন্তু গুমের ক্ষেত্রে স্বজন জীবিত না মৃত—এটাই পরিবার জানে না। এটি ভিন্ন মাত্রার অপরাধ, যা সাধারণ অপরাধের সঙ্গে তুলনীয় নয়।”
বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য লড়াইরত সব রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তাসনিম জারা। তার ভাষায়, “আমরা আর সেই রাষ্ট্রে ফিরতে চাই না, যেখানে নাগরিকদের গুম করা হয়। দলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়েও এটি সবার দাবি হতে হবে।”
‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক গুম দিবসকে সামনে রেখে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে যাতে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো তাঁদের স্বজনদের ফিরে পাওয়ার দাবিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে এবং বিচারের আওতায় আনতে পারে দায়ীদের।