উপদেষ্টা হাসান আরিফ আর নেই

অন্তর্বর্তী সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রবীণ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। গতকাল বিকালে খাওয়ার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন তাঁকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যান। পরীক্ষানিরীক্ষা শেষে বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিকালে দুবাই থেকে ঢাকায় অবতরণের পরপরই হাসান আরিফের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রয়াত উপদেষ্টাকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে বিমানবন্দর থেকে ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে ছুটে যান ড. ইউনূস। এছাড়া হাসপাতালে ছুটে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেক উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক ব্যক্তি, আইনজীবীসহ অনেকে। প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও উপদেষ্টাগণ, রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন ব্যক্তি ও আইনজীবীরা গভীর শোক জানিয়েছেন। উপদেষ্টার স্বজনরা বলেছেন, হাসান আরিফ ভাত খাচ্ছিলেন, ওই অবস্থায় পড়ে যান। হাসপাতালে নেওয়া হলে পরীক্ষানিরীক্ষার পর ৩টা ৩৫ মিনিটে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আসলে তাঁকে মৃত অবস্থায়ই পাওয়া যায়। তাঁর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল।

অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রীদ চাকমা, ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহদিউদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ অনেকেই।

১৯৪১ সালের ১০ জুলাই কলকাতায় হাসান আরিফের জন্ম। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও এলএলবি করেন। ১৯৬৭ সালে কলকাতা হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর তিনি সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবী ছিলেন ‘এ এফ হাসান আরিফ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’ চেম্বারের প্রধান। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে ১৯৮২ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৮৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সালের আগস্ট থেকে ১৯৯৬ সালের মার্চ পর্যন্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। হাসান আরিফ ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের একজন প্যানেল সদস্য ছিলেন তিনি। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন জানান, গতকাল ইশার নামাজের পর ধানমন্ডি ৭ নম্বরে বায়তুল আমান মসজিদে উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের নামাজে জানাজা হয়। আজ বেলা ১১টায় হাই কোর্ট প্রাঙ্গণে আরেক দফা জানাজা হবে। তাঁর মেয়ে বিদেশে থাকেন, দেশে ফিরলে দাফনের সিদ্ধান্ত। আগামীকাল তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুন: