নিয়োগের সুনিশ্চিত ঘোষণার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

আজকের এই আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত প্রিয় নিয়োগ বঞ্চিত নিবন্ধন সনদ ধারী ভাই ও বোনেরা, উপস্থিত আছেন প্রানপ্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগন ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যবৃন্দ সহ সকল সচেতন নাগরিক এবং সুশীল সমাজের শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তিবর্গ। আপনাদের সকলকে আমাদের এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রানঢালা অভিনন্দন ও সালাম জ্ঞাপন করছি। আপনারা নিশ্চয়ই বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে অবগত আছেন যে, নিয়োগ দেওয়ার নামে আকাশচুম্বী দূর্নীতি ও এক বিরল প্রতিষ্ঠান আছে, যার নাম NTRCA ( Non-government teachers’ registration & certification authority) ।

যাকে আমরা বলে থাকি Non Trusted, Research and corrupted authority. অর্থাৎ অবিশ্বাসী, দূর্নীতিগ্রস্হ গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান। যেই প্রতিষ্ঠানটির এখন নাম করণ করতে চায় NTSC = Not a single teacher will be Selected without corruption অর্থাৎ একজন শিক্ষকও দূর্নীতির বাইরে নিয়োগ দেওয়া হবে না। ফলে নামের পরিবর্তন করে লাভ নেই বরং নীতি নৈতিকতার পরিবর্তন বড্ডই প্রয়োজন।

কারণ এ পর্যন্ত ৫টি গণবিজ্ঞপ্তিতে যেভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার কোনো নিয়োগের সময় এনটিআরসিএ বৈধ সনদ ধারী দের কাছে তার স্বচ্ছতা সুনিশ্চিত করতে পারে নাই। বরং উল্টো আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক দুইজন মন্ত্রী ডা. দিপু মনি ও ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল এর যোগসাজশে দূর্নীতির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল। যার ছোট্ট নমুনা জনসমক্ষে প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দের মাধ্যমে উপস্থাপন করছি।

১| একজনের সনদ অন্য জনে ব্যবহার করে চাকরি করছেন।অর্থাৎ যিনি পাস করছেন তার রোল নম্বর ভিন্ন ব্যক্তি ব্যবহার করছেন।

২| প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে এনটিআরসিএ ৬০ হাজারের বেশি জাল সনদ ধারী নিয়োগ দিয়েছে । আমাদের হিসেবে এই সংখ্যা কয়েকগুণ হবে। জনপ্রতি জাল সনদ ২ লক্ষ ও এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিতে ৬/ ৮ লক্ষ টাকায় চাকরি দিয়েছেন । পত্রিকার হিসেবে ৪৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি বানিজ্য করেছেন।

৩| আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল স্যার সংসদে বলেছেন ৯৯ হাজার বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এ বছর। অথচ ৩১ মার্চ,২০২৪ ইং তারিখে যে বিঞ্জপ্তি দিয়ে সুপারিশ করছে তাতে ১৯৫৮৬ জন শিক্ষক সুপারিশ পেয়েছে, যাদের প্রায় ৭ হাজার শিক্ষক মাধ্যমিক পর্যায় থেকে কলেজ পর্যায়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বাকী ৭৮/৭৯হাজার শিক্ষক গোপনে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন এটা স্পষ্ট।

৪| কখনও ৩৫ এর বেশি বয়সের কাউকে চাকরি দিবে না বলা হলেও ৪র্থ গণবিঞ্জপ্তিতে ১ম-৫ম ব্যাচের ৪৪০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে । যাদের কারোরই বয়স ৩৫ এর নীচ হবে না। অথচ আমরা যখন পাস করেছি তখন কারোরই বয়স ৩০ বছর হয়নি । এমনকি ১২/৬/২০১৮ ইং তারিখের আগে যারা পাস করেছি সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী তাদের বয়স আজীবন বলবৎ থাকবে ।

৫| আবেদনই করেন নাই অথচ নরসিংদী জেলার পলাশ থানাধীন খুদি মাহমুদ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম এর শ্যালিকা রাবেয়া সুলতানা কে চাকরি দেওয়া হয়েছে , নিশ্চয়ই অর্থের বিনিময়ে।

৬| একই প্রতিষ্ঠানে একই ব্যক্তি আবেদন করেছে ৩য় ও ৪র্থ এবং ৫ম বিঞ্জপ্তিতে। অথচ নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে সেখানে যোগ্য শিক্ষক পাওয়া যায়নি । এই ব্যাপারে সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দিপু মনি কে বললে ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দিলেন কিন্তু পরে ভুক্তভোগী নিবন্ধন সনদ ধারীকে ডেকে লিখতে বাধ্য করেছে এনটিআরসিএ,ঐ নিবন্ধন সনদ ধারীর সনদই জাল, আর এই লিখিত না দিলে তাকে বিভিন্ন রকমভাবে ধমক দেওয়ায় ঐ বিষয়টি আর আলোর মুখ দেখতে পারে নাই ।

৭| সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দিপু মনি কে যখন ড্রাইভার জিয়াউর ও সিস্টেম এনালিস্ট রাসেল এর দূর্নীতির কথা বলা হলো তখন তো উনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলেছিলেন, সাংবাদিক এমন নিউজ নাকি মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও করলে সাংবাদিককে ডেকে ধমক দেওয়ায় সেই সাংবাদিক মাফ চেয়ে চলে গেছেন ।

৮| ৩য় গনবিঞ্জপ্তিতে ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে যে মিথ্যাচার করা হয়েছে, সেখানে মাত্র ১০/১২ হাজার বেকার নিবন্ধন সনদ ধারী নিয়োগ পেয়েছে। বাকী সবাই ইনডেক্সধারী, প্রকারন্তরে শিক্ষক নিয়োগের নামে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বদলী বানিজ্য করেছে ।

৯| লক্ষাধিক পদ খালি আছে,শুধু সদিচ্ছার অভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে বৈধ সনদ ধারী দের নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা করেই চলছে। যা বর্তমান বৈষম্য দূরীকরণ এর সাথে সাংঘর্ষিক চিন্তা ধারার বহিঃপ্রকাশ।
এছাড়াও এনটিআরসিএ’র কতিপয় নিন্মোক্ত ভুলের মাশুল গুনতে গিয়ে আমাদের জীবন ছন্নছার হওয়ার উপক্রম হয়েছে :

১. অন্য ১০টি পরীক্ষার মতো শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নিবন্ধিত শিক্ষকদের ইউনিক আইডি (রোল) প্রদান না করা;
২. সম্মিলিত মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হলেও পিক অ্যান্ড চুজ পদ্ধতিতে নিয়োগ সুপারিশ করা; সম্মিলিত মেধাতালিকা ১-১৭টি ব্যাচে উত্তীর্ণদের অ্যাড করা, কিন্তু সুপারিশ প্রাপ্ত ইনডেক্সধারীদের তালিকা বর্হিভূত বা পৃথক না করা;
৩. এন্ট্রিলেভেল নিবন্ধিত শিক্ষকদের সাথে ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের নিয়োগ সুপারিশের সুযোগ রেখে প্রকৃতপক্ষে বদলি বাস্তবায়ন করা;
৪. প্রতি গণবিজ্ঞপ্তির শূন্যপদগুলো আবেদনকৃত যোগ্য প্রার্থী দ্বারা পূরণ না করে প্রকান্তরে কৃত্রিম শিক্ষক সংকট তৈরি করা;
৫. একই প্রতিষ্ঠানে প্রতি গণবিজ্ঞপ্তিতেই একই ব্যক্তির আবেদন গ্রহণ করা এবং যোগ্য প্রার্থী থাকার পরও নতুন (ক্ষেত্রবিশেষ স্বজনপ্রীতি ও ঘুষবাণিজ্যও উদ্দেশ্যে) প্রার্থী খোঁজা এবং ক্রমানয়ে অপেক্ষমান যোগ্যদের তালিকা দীর্ঘায়িত করা এবং সনদ বানিজ্যের মহোৎসবে মেতে উঠা।
৬. অপরদিকে নিবন্ধিত সনদসংখ্যা ছয় লাখ অতিক্রম করলেও প্রকৃত চাকরিপ্রত্যাশী (চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে স্কুল-কলেজের বিপরীতে ৮১ হাজার) শিক্ষকদের নিয়োগ জনিত উদ্দোগ সরকারি বাজেটের অন্তরায় দেখিয়ে দ্বিমাতাসুলভ আচরণ করা;
৭. নিবন্ধিত নিয়োগ প্রার্থীদের এন্ট্রিলেভেল বয়স বিবেচনা না করা, ক্ষেত্রবিশেষ বিজ্ঞ আদালতের রায় প্রয়োগ না করে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা ।

উপরোক্ত অনিয়ম, দূর্নীতির একটা ছোট্ট তালিকা মাত্র। আমরা আমাদের বঞ্চিত নিবন্ধন সনদ ধারী নিয়োগের অধিকার ফিরিয়ে পেতে চাই। এই লক্ষ্যে আমরা বলতে চাই, সকল দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি এবং অনৈতিকভাবে যে সকল বৈষম্য সৃষ্টি করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে সকল বৈষম্য দূরীভূত করে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং ১ম-১২তম বৈধ নিবন্ধন সনদ ধারীদের অবিলম্বে নিয়োগের সুনিশ্চিত ঘোষণা দিতে হবে। আর এক মুহূর্তও বিলম্ব নয়, এখনই নিয়োগের সুনিশ্চিত ঘোষণা করতে হবে ।

অন্যথায় আগামী ২২ ডিসেম্বর অনির্দিষ্টকালের জন্য এনটিআরসিএ’র সকল কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে এনটিআরসিএ নিয়োগের সুনিশ্চিত ঘোষণা না করা পর্যন্ত বোরাক টাওয়ার এর সামনে ইস্কাটন গার্ডেন রোডে আমাদের আইনগত অধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য সর্বাত্মক শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে ইনশাআল্লাহ। আমরা আলোচনায় বিশ্বাসী, মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টার বানী রাজপথ নয় আলোচনার মাধ্যমে বৈধ দাবী পূরণ করাহবে। ফলে আমরাও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বিষটি সুরাহা করার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধান সমন্বয়ক
জি. এম ইয়াছিন
এম.ফিল,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,গবেষক

আরও পড়ুন: