নিষিদ্ধ সংগঠনের সংকলিত সারমর্ম আত্মসমালোচনা পদ্ধতি

আমাদের প্রকৃত শিক্ষক জনগণ, তাঁদের কাছ থেকে শেখার ধৈর্য, বিনয় ও জ্ঞান আমাদের অর্জন করতে হবে

শহীদ কমরেড রাকেশ কামাল পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল)(লাল পতাকা)’র প্রয়াত সম্পাদক তাঁদের পার্টির চার দশকের বিপ্লবী অভিজ্ঞতার একটি সামগ্রিক সারসংকলনের লক্ষ্য থেকে একটি সার্বিক দলিল রচনা করেন। দলিলটির শিরোনাম ছিল “সারসংকলনমূলক প্রতিবেদন”। দলিলটি “(প্রাথমিক) খসড়া রূপরেখা” আকারে ছিল। যা তখনও তাদের সিসি কর্তৃক অনুমোদিত নয়, এবং তার প্রচার ছিল সীমাবদ্ধ।

কমরেড রাকা’র লক্ষ্য ছিল এই প্রাথমিক খসড়া দলিলটিকে শুধু তাঁর পার্টির মধ্যেই নয়, সমগ্র মাওবাদী আন্দোলনে আলোচনার জন্য পেশ করা। কারণ, চূড়ান্ত করবার আগে তিনি এর উপর নিজ পার্টির সিসি ছাড়াও সমগ্র মাওবাদী আন্দোলনের মতামত ও পরামর্শ শুনতে চেয়েছিলেন। যা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক উদ্যোগ। সেজন্যই তিনি দলিলটি প্রাথমিকভাবে রচনার পরই নিজ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের মাঝে পেশ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন মাওবাদী কেন্দ্র ও শক্তির কাছেও তার কপি প্রদান করেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এর কিছু পরই তিনি গ্রেফতার হন এবং ২৭ জুলাই,’০৮-এ শত্রু তাঁকে হত্যা করে। ফলে তিনি দলিলটিকে চূড়ান্ত করে যেতে পারেননি। এমনকি তাঁর পার্টিতে এবং অন্য মাওবাদী শক্তিগুলোর সাথে এ দলিলের ভিত্তিতে পর্যাপ্ত আলোচনা ও মত-বিনিময়ের সুযোগও পাননি। ফলে দলিলটি “প্রাথমিক খসড়া” রূপেই থেকে যায়।

দলিলের প্রধান সারসংকলনমূলক এই অধ্যায়টি নিয়মিত প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার কিছু অংশ আজ……

১৯৭১-এর ১৪ই জুন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) গঠিত হওয়ার পর থেকে ’৭৪ পর্যন্ত কোনো সামগ্রিক রণনৈতিক পরিকল্পনা ছাড়াই পাবনা-রাজশাহী-দিনাজপুর, যশোর-খুলনা-কুষ্টিয়া ও সিলেট-চট্টগ্রাম অঞ্চলে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে বহু ছোট-বড় উত্থান ও বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটতে থাকল। পার্টির নিয়মিত গেরিলা বাহিনী কোথাও কোথাও বিডিআর ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ আক্রমণ প্রতিহত করে দিল। রাজশাহী-যশোর-কুষ্টিয়া জেলার কয়েকটা থানা এবং পুলিশ, বিডিআর ও রক্ষিবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করে অস্ত্র দখল করা হল। শ্রেণীশত্রুদের বন্দুক দখল করা হল। বহু গ্রামে বিপ্লবী কৃষক কমিটি গঠন করে, জোতদারের জমি ও খাসজমি দখল করে, ভূমিহীন ও গরিব কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা হল, গণআদালত বসানো হল, হাট-ঘাট-খাল-বিল ইত্যাদি থেকে তোলা-ধলতা-ইজারাদারি উচ্ছেদ করা হল। সারা দেশের নিপীড়িত জনগণের মধ্যে প্রবল আশার সঞ্চার হল। আর শোষক শ্রেণী হল আতঙ্কে দিশেহারা। সংশোধনবাদের ভিতও গেল টলে।

সংশোধনবাদীদেরকে পক্ষে রেখে সামন্ত ও আমলা-মুৎসুদ্দি পুঁজিপতি শ্রেণীর প্রতিনিধি ফ্যাসিস্ট মুজিব সরকার সোভিয়েত-ভারতের মদদপুষ্ট হয়ে, রক্ষিবাহিনী, পুলিশ, বিডিআর ও মিলিটারি নিয়ে বিপ্লবী কৃষক জনতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। পার্টির মতাদর্শিক-রাজনৈতিক লাইনের দুর্বলতা, শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গি-শ্রেণীলাইন-শ্রেণী নির্ভরতার অভাব এবং মাওবাদী গণযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ সঠিক লাইনের অভাবের ফলে সমস্ত সশস্ত্র সংগ্রামের এলাকাগুলোকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দেওয়া সম্ভব হল। শত শত কমিউনিস্ট বিপ্লবী ও বিপ্লবী কৃষক জনতা জীবন দিলেন। সমস্ত কেন্দ্রীয় নেতা হয় শহিদ হলেন, নয় গ্রেপ্তার হয়ে জেলে চলে গেলেন।

১৯৭৬ সালে কেন্দ্রীয় নেতারা জেল থেকে বের হয়ে এলেন। সামান্য কিছু সারসংকলনের ভিতর দিয়ে পুনরায় প্রায় একই প্রক্রিয়ায় সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা করা হল। গড়ে উঠল কেবল শ্রেণীশত্রু খতমের মাধ্যমে সৃষ্ট ‘এ্যাকশন এলাকা’। পাবনা-সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল, যশোর-খুলনা-কুষ্টিয়া, রাজশাহী-নাটোর-নওগাঁ-চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ৯০-এর দশকের গোড়া থেকে ২০০৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলল এই প্রক্রিয়া। আবারো প্রায় একই প্রক্রিয়ায় এই বিপ্লবী উত্থানকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দেওয়া হল। কয়েকজন নেতৃস্থানীয় কমরেডসহ শত শত পার্টি সংগঠক, বীর গেরিলা ও বিপ্লবী জনগণ শহিদ হলেন। বহু পার্টি সদস্য ও সমর্থক কারাগারে নিক্ষিপ্ত হলেন। এই সশস্ত্র কৃষি বিপ্লবী সংগ্রামে আমরা যেমন অনেক গৌরবজনক বিজয় অর্জন করেছি তেমনি বহু ক্ষয়ক্ষতি, ব্যর্থতা ও নৈতিক বিচ্যুতিরও মুখোমুখি হয়েছি। ফলে আমরা আমাদের লড়াইতে সাময়িকভাবে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি। এখন আমরা প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিয়ে আমাদের পরাজয়কে বিজয়ে পরিণত করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।

৭১ থেকে ৭৪-য়ে পার্টি বয়স ও অভিজ্ঞতায় ছিল নবীন, তাই ভুল করাটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু ৯০-এর দশকে পার্টি বয়স ও অভিজ্ঞতায় খুব একটা নবীন ছিল না। তা ছাড়া সংশোধনবাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা ও সংগ্রাম, বিপ্লবকে সফল করার দৃঢ় সংকল্প এবং মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের প্রতি অবিচল আস্থা থাকা সত্ত্বেও আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে ও মালেমা-কে সামগ্রিকভাবে উপলব্ধি করার মধ্যে আগেকার এমন কিছু গুরুতর ঘাটতি থেকে গিয়েছিল যার জন্য আমরা একই ধরনের কিছু ভুল বারবার করে গিয়েছি। উক্ত ঘাটতিগুলো মতাদর্শগত বিচ্যুতি হিসাবে আমাদের রাজনৈতিক- রণনৈতিক ও কৌশলগত লাইনে কিছু কিছু মাত্রায় প্রতিফলিত হয়েছিল। ফলে প্রতিবারই পার্টি অভ্যন্তরীণ কারণে শক্তি হারাতে থাকে, অর্থাৎ শক্তির মূল উৎস জনগণ থেকে একটু একটু করে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে থাকে।

প্রতিক্রিয়াশীলদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ফ্যাসিস্ট হামলা বিপর্যয়কে ত্বরান্বিত ও প্রসারিত করে। সুতরাং এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে বিজয়ের পথে সাফল্যের সঙ্গে এগোতে হলে ঐ গুরুতর ঘাটতিগুলো বা মতাদর্শগত বিচ্যুতিগুলো আমাদেরকে চিহ্নিত করে সংশোধন করতে হবে। আমরা অবশ্যই মালেমা-র আলোয় আমাদের অতীত ভুলভ্রান্তির, উপলব্ধির ঘাটতির এবং সেগুলোর শ্রেণীভিত্তির বিশ্লেষণ ও সমালোচনা করব। এভাবে আমরা আমাদের মতাদর্শগত বিভ্রান্তি শুধরে নিয়ে সমগ্র পার্টিকে একজন মানুষের মতো করে মতাদর্শিক রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ ও সংহত করে তুলতে পারব এবং বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে বৃহত্তর বিজয়ের পথে এগিয়ে যেতে পারব।

মনে রাখতে হবে যেখানেই সংগ্রাম সেখানেই আত্মত্যাগ অনিবার্য, মৃত্যু সেখানে সাধারণ ঘটনা। অর্থাৎ আমরা যদি শুধু আমাদের ভুলত্রুটি আর ক্ষয়ক্ষতির দিকেই আমাদের দৃষ্টি সীমাবদ্ধ রেখে সাফল্যগুলোকে না-দেখি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অগ্রগতি বুঝতে ব্যর্থ হই, তা হলে আমরা আমাদের পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতাকে যথাযথ দ্বান্দ্বিক নিয়মে বিশ্লেষণ করতে অপারগ হব এবং ভবিষ্যতে বিপ্লবের প্রতি আমাদের কর্তব্য পালনে মারাত্মকভাবে বিচ্যুত হব।ই সংকটের সময় বিগত সশস্ত্র সংগ্রামের সারসংকলন করার ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্যের কথা ভুলে যাওয়া চলবে না, বরং উজ্জল ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সাহস সঞ্চয় করতে হবে।

পার্টিতে প্রতিটা বিপর্যয়ের পর দুধরনের ক্ষতিকর ঝোঁক দেখা দিয়েছে। একটা ঝোঁক মনে করেছে, আমাদের গোটা লাইনটাই ছিল প্রধানত ভুল লাইন—এই ঝোঁক আমাদের সাফল্যগুলোকে খুব ছোট করে দেখিয়েছে। অন্য ঝোঁকটা মনে করেছে, আমাদের লাইনে কোনো ভুলই ছিল না, প্রয়োগে ভুল করেছি বলে বিপর্যয় এসেছে।

প্রথম ঝোঁকটা মারাত্মক বিপজ্জনক। কারণ বিশ্বব্যাপী মতাদর্শগত ফ্রন্টে এখনো সংশোধনবাদই প্রধান বিপদ। এই ঝোঁক আমাদেরকে ঐ প্রধান বিপদের মধ্যে নিয়ে যাবে এবং সশস্ত্র কৃষি বিপ্লব অতিক্রমের অযোগ্য বাধার মুখে পড়বে।….

এই দ্বিতীয় ঝোঁকটার বিরোধিতা করার সময় আমাদের যথেষ্ট মাত্রায় সতর্ক থাকতে হবে, না-হলে সেটাও আমাদের প্রথম বিচ্যুতির মধ্যে নিয়ে ফেলতে পারে। অর্থাৎ আমাদের সাফল্যকেও ব্যর্থতা হিসাবে চিহ্নিত করে সশস্ত্র বিপ্লবী সংগ্রামই পরিত্যাগ করার ঝোঁক দেখা দিতে পারে। কিংবা বর্তমান এই ব্যর্থতা নেতৃত্বের পরিকল্পিত চক্রান্ত এমন ধারণাও কারো কারো মধ্যে দেখা দিতে পারে, যা নেতৃত্ব ও কর্মী মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মারাত্মক আত্মমুখীবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটিয়ে পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ ও সংহত করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনতিক্রম্য বাধার সৃষ্টি করতে পারে।

যেসব কমরেড এখনো কঠোর সংগ্রামের মধ্যে দৃঢ়তা ও বিপ্লবী জঙ্গিত্ব বজায় রেখে, পার্টির লাল পতাকার মর্যাদা রক্ষায় আদর্শ স্থাপন করে চলেছেন তাঁদের জন্য সমস্ত আকাঙ্খা, সন্দেহ ও অর্থহীন আত্মাভিমান ঝেড়ে ফেলে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের ভিত্তিতে আত্মসমালোচনা করা ও বিপ্লবী শিক্ষা গ্রহণ করা, বিপ্লবকে সফল করার জন্যই, মূল কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দায়িত্ব সফলভাবে পালন করার মাধ্যমেই আমরা পার্টিকে আজকের মতাদর্শগত ত্রুটি ও বিভ্রান্তি থেকে বের করে আনতে পারি, লেনিনীয় নীতিভিত্তিক ঐক্যবদ্ধ ও সংহত শক্তিশালী পার্টি গড়ে তুলতে পারি এবং বিপ্লবের বিজয় অর্জনের জন্য সমগ্র জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে শত্রুদের পরাজিত করার হাতিয়ার হিসেবে বিপ্লবী যুক্তফ্রন্ট ও সশস্ত্র বাহিনীকে পার্টির দুই শক্তিশালী অস্ত্রে পরিণত করতে পারি।

আত্মসমালোচনা একটা দীর্ঘ, জটিল ও বহুমুখী কর্মকান্ড। বিশেষত আমাদের দেশের বিপ্লবের ইতিহাস এটাকে সেই সঙ্গে যৌথ কর্মকান্ডে পরিণত করারও দাবি জানাচ্ছে। শুধু আমরা একাই এটা করলে চলবে না। আমাদের মতো আরো যাঁরা মাওবাদের আলোকে ঘটনাবলীর বিচার বিশ্লেষণ করেন এবং সশস্ত্র কৃষি বিপ্লবকেই এ-দেশের জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের সারবস্তু বলে মনে করেন তাঁদের সকলের মতামতের ভিত্তিতেই এ-দেশের বিপ্লবী সংগ্রামের ইতিহাসের যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ সারসংকলন সম্ভব।

তবে অন্যদের মতামত আমরা তখনই পাব, যখন আমরা আমাদের নিজস্ব মতামত গড়ে তুলব। আমাদের নিজস্ব মতামতও একদিনে পূর্ণরূপ পরিগ্রহ করবে না। এই আত্মসমালোচনামূলক প্রাথমিক খসড়া পর্যালোচনাকে প্রথমত, কেন্দ্রীয় মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ভিতর দিয়ে চূড়ান্ত খসড়ায় রূপ দিয়ে পার্টির মধ্যে উচুতলা থেকে নিচুতলা পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, এটাকে বিরাট শিক্ষা অভিযানে পরিণত করতে হবে। যাতে এটা পার্টি সদস্যদের উপলব্ধি ও অনুশীলনের মধ্যে জমে থাকা ভুল চিন্তাগুলোকে ঝেড়ে ফেলতে মালেমা-র আলোয় সঠিক নীতি ও উপলদ্ধি আয়ত্ব করতে সাহায্য করতে পারে। তা হলে এই আত্মসমালোচনা নিজেই একটা সংগ্রামে পরিণত হয়ে পার্টির মধ্যে পরিচ্ছন্নতা অর্জনের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারবে। একদিন গোসল করলে যেমন চিরতরে পরিষ্কার হওয়া যায় না, আবার ময়লা জমে এবং প্রতিদিন গোসল করা অভ্যাসে পরিণত করতে হয়। তেমনি আত্মসমালোচনাও একদিনের কাজ নয়, একজন-দুজনের কাজও নয়। এটা গোটা পার্টির প্রত্যেকের কাজ এবং প্রতিদিনের কাজ। ভালোভাবে গোসল করতে গেলে যেমন সাবান লাগে, ভালোভাবে আত্মসমালোচনা করতে গেলে তেমনি মালেমা-র নীতি ও উপলদ্ধি লাগে এবং তা যে অল্প কয়েক জনের লাগে তাই নয়, পার্টির প্রত্যেকেরই লাগে। তাই আমাদের আত্মসমালোচনার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত পার্টির প্রত্যেকটা সদস্যের কাছে মালেমা-র সঠিক নীতি ও উপলব্ধি পৌঁছে দেওয়া।

আর একটা মৌলিক বিষয় মনে রেখে আমাদেরকে এই পর্যালোচনায় হাত দিতে হবে তা হচ্ছে—আমাদের প্রকৃত শিক্ষক এ-দেশের জনগণ, তাঁদের কাছ থেকে শেখার জন্য প্রয়োজনীয় ধৈর্য, বিনয় ও জ্ঞান আমাদের অর্জন করতে হবে। তা না-করে আমরা যদি আত্মগত চিন্তার খপ্পরে পড়ে আমাদের বইতে পড়া বিদ্যার কাঠামোর মধ্যে বাস্তবকে খাপ খাওয়াতে চাই আর নিজেদের সর্ব জ্ঞানের জ্ঞানী ধরে নিয়ে পার্টির উপর অবাস্তব সমাধান চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি, তা হলে পুরনো ভুল শুধরাতে গিয়ে আরো ক্ষতিকর ভুলের মধ্যে গিয়ে পড়ব। তা ছাড়া আমাদের পার্টির সদস্য, সমর্থক ও গেরিলা স্কোয়াডের সদস্যরা যাতে আমাদের অতীত ভুলের ব্যাপকতা ও গভীরতা এবং তার কারণগুলো বুঝতে পারেন তার জন্য আমাদের অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে সংগ্রাম চালাতে হবে। সুসংবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া এটা সম্ভব হবে না। এই সংগ্রামকে অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে চালাবার জন্য সব রকমের যত্ন নিতে হবে।

আমাদের এই আত্মসমালোচনায় কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে?

প্রথমত, আমাদের সাফল্যগুলো অর্থাৎ আমাদের অতীত ধারণা ও প্রয়োগের সঠিক দিকগুলো।
দ্বিতীয়ত, আমাদের ব্যর্থতা বা প্রয়োগের প্রধান ত্র“টি এবং তার পিছনের ভুুল ধারণাগুলো।
তৃতীয়ত, এই সাফল্য ও ব্যর্থতা থেকে যে শিক্ষাগুলো আমাদের নেওয়া উচিত।

সংকলিত:

আরও পড়ুন: