সুনামগঞ্জে বালু লুটের আশঙ্কা, জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জেলা প্রশাসনের

সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন নদ–নদী ও বালুমহালে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পরিবহন আবারও লুটের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া এ বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়ে স্থানীয় জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের সরকারি ফেসবুক পেজে দেওয়া এক সতর্কতামূলক পোস্টে বলা হয়, সম্প্রতি সিলেটের সাদা পাথর লুটের ঘটনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সুনামগঞ্জে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের চেষ্টা চালাচ্ছে। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী অবৈধ বালু উত্তোলন ও পরিবহন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই যে কোনো ঘটনা দ্রুত প্রশাসনকে জানানোর জন্য দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইজারা জটিলতা ও লুটের আশঙ্কা
সুনামগঞ্জের বড় পাঁচটি বালুমহালের মধ্যে তিনটি চলতি বছর এখনো ইজারা হয়নি। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই এসব মহাল থেকে বালু ও পাথর লুট শুরু হয়। প্রথম দিকে প্রশাসন ও পুলিশ নীরব থাকলেও সমালোচনার মুখে পরবর্তীতে অভিযান শুরু হয়। এ ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং বদলি করা হয় তৎকালীন পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খানকে।
তবুও চলতি, যাদুকাটা নদীসহ বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। গত সোমবার প্রশাসন সদর উপজেলার জয়নগর এলাকা থেকে ১০ লাখ ঘনফুট বালু জব্দ করে। একই দিনে দোয়ারাবাজার উপজেলার খাসিয়ামারা নদীতে তিনটি বাল্কহেড জব্দ ও একজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাহিরপুরে স্থানীয়দের হাতে আটক কয়েকজন বালু চোরকেও পুলিশে দেওয়া হয়।
অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু প্রশাসন জব্দ করে নিলামে দিলেও এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালীদের ‘ম্যানেজ’ করেই বালু ও পাথর উত্তোলন করা হয়।
জেলার সবচেয়ে বড় বালুমহাল তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীতে দুটি মহাল রয়েছে, যার ইজারা দেওয়া হয়েছিল ১০৮ কোটি টাকায়। তবে উচ্চ আদালতের মামলার কারণে ইজারাদার এখনো মহাল বুঝে পাননি। এপ্রিল মাসে প্রশাসন যাদুকাটাসহ পাঁচটি মহাল থেকে উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সর্বশেষ ১৯ আগস্ট রিটের রায়ে ইজারাদারের অনুকূলে সিদ্ধান্ত হলেও প্রশাসন এখনো রায়ের কপি হাতে পায়নি।
সুনামগঞ্জ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমরা বালু-পাথর লুট চাই না। সরকারিভাবে বিক্রয়কেন্দ্র চালু করতে হবে, যাতে হাজারো শ্রমজীবী মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি হয়। একই সঙ্গে বোমা মেশিন, শ্যালো মেশিন ও ড্রেজার দিয়ে পরিবেশ বিধ্বংসী উত্তোলন বন্ধ করতে হবে।”
হাওর ও নদী রক্ষা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল হক বলেন, “আমরা ইজারার বিপক্ষে নই, তবে ড্রেজার দিয়ে নদী ধ্বংসের বিরুদ্ধে। শ্রমিকেরা যাতে হাতে বালু তুলে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।”
এদিকে আট বছর ধরে ইজারা বন্ধ থাকা চলতি নদীর ধোপাজান বালুমহাল থেকে প্রায় ১ কোটি ২১ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ অনুমতি পেয়েছে। নদীর সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় বিস্তৃত অংশ থেকে এই বালু তোলা হবে, যা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাজে ব্যবহৃত হবে বলে জানানো হয়েছে।
ধোপাজান নদী থেকে উত্তোলনের অনুমতি প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক ইলিয়াস মিয়া সরাসরি মন্তব্য না করলেও বালু লুট বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি যেন কোনোভাবে লুট না হয়। কোথাও ছোটখাটো অভিযোগ পেলেই অভিযান চালাচ্ছি। জনগণের সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব নয়।”
👉 পরিবেশ ও নদী রক্ষার স্বার্থে বালু উত্তোলনে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, আইনি কাঠামো এবং স্থানীয় জনগণের সক্রিয় ভূমিকা এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।