বাংলাদেশের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার চীন
বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে চীন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। একই সময়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বেসরকারি খাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) তথ্য মতে, ২০১০ সালের শুরুর দিকে আমদানিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যায় চীন এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এই ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে।
এ ছাড়াও গত সপ্তাহে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জুন মাসে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বেড়ে ১৫ দশমিক ১৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা আগের অর্থবছরের এ সময়ের তুলনায় শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে।
অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আগের বছরের জুনের তুলনায় চলতি বছরের জুনে শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ পয়েন্ট কমে ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রাথমিকভাবে চীন থেকে শিল্পের কাঁচামাল, সেমি ফিনিশড পণ্য এবং ভোগ্যপণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। অপর দিকে পাটের সুতা, পাটপণ্য হাইড চামড়া এবং প্রক্রিয়াজাত চুলের মতো পণ্য রপ্তানি করে।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, শিল্পায়নের জন্য বাংলাদেশ চীনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে কারণ বেশির ভাগ উৎপাদন সম্পর্কিত পণ্য সেখান থেকেই আসে। তিনি অন্যান্য দেশের তুলনায় চীনের মূল্য প্রতিযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরেন এবং বলেন, ভৌগোলিক কারণে কম পরিবহন খরচ চীন থেকে আমদানির ব্যয় আরও কমিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, চীনের বৈশ্বিক মূল্য প্রতিযোগিতা এটিকে শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, অন্যান্য অনেক দেশের জন্যও একটি আকর্ষণীয় ব্যবসায়িক অংশীদার করে তুলেছে। সাশ্রয়ী মূল্যের শিল্পসামগ্রী সরবরাহ করায় চীনকে প্রায়শই বিশ্বের কারখানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশি ও চীনা উদ্যোক্তাদের মধ্যে সম্পর্ক আস্থা ও পারস্পরিক সুবিধার বৈশিষ্ট্য বাণিজ্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। চীনা রপ্তানিকারকরা প্রায়ই বাংলাদেশি আমদানিকারকদের বিলম্বে অর্থ প্রদানের সুবিধাসহ আরও অনেক প্রণোদনা দেয়। চীন বর্তমানে মূল্যস্ফীতির সম্মুখীন হচ্ছে, তাদের কারখানাগুলোকে দাম কমাতে প্ররোচিত করছে, যার ফলে বিশ্বব্যাপী চীনের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে একটি বৈশ্বিক বাণিজ্য শক্তি হাউস হিসেবে ২০২২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৭৪টি দেশ এবং অঞ্চলের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। তারপরও ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট আমদানির কারণে সবচেয়ে বড় বাণিজ্য ঘাটতি তাইওয়ানের সঙ্গে। ইলেকট্রনিক্স এবং যন্ত্রপাতি আমদানি করায়। জাপানের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ১১৯০ কোটি ডলার এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ৩৭৮০ কোটি ডলারের ঘাটতি রয়েছে।
এ ছাড়াও লোহা, সোনা, লিথিয়াম এবং তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের মতো প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহকারী রাশিয়া এবং সৌদি আরবের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার মতো তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সঙ্গেও চীনের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।