শেরপুরের বন্যা: মৃত্যু চার, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
শনিবার সকাল থেকে থেমে থেমে আবার বৃষ্টি হওয়ায় বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।টানা প্রবল বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা কবলিত শেরপুরে পানিতে ডুবে তিনজন মারা গেছেন। এছাড়া বন্যার পানিতে ভেসে এসেছে এক অজ্ঞাতনামার লাশ।
জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদীর কমপক্ষে ১৮টি ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তাঘাট, বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। অসংখ্য বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।তিনদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে স্থানীয় পাহাড়ি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। সেই সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল যোগ হয়ে শেরপুরের এই বন্যা দেখা দিয়েছে।
শনিবার সকাল থেকে থেমে থেমে আবার বৃষ্টি হওয়ায় এসব ইউনিয়নের বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।অনেক স্থানে পাহাড়ি ঢলের পানির প্রবল তোড়ে ভেঙে গেছে ঘরবাড়ি, গাছপালা। তলিয়েছে ফসলের খেত, ভেসে গেছে মাছের পুকুর ও ঘের। অনেক বাড়িতে রান্না-খাওয়া বন্ধ রয়েছে।
এর মধ্যে পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতে শেরপুর থেকে তিনআনী হয়ে নালিতাবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের রানীগাঁও সেতুর কাছে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় শনিবার দুপুর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. সুকল্প দাস বলেন, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় জেলার রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা তৈরি হয়েছে।এর মধ্যেই ৭ হাজার ৬৯৬ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান সম্পূর্ণ নিমজ্জিত, ৯ হাজার ৬৯৩ হেক্টর জমির রোপা আমন আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে।
এছাড়া ২০৮ হেক্টর জমির সবজির সম্পূর্ণ এবং ৪১৩ হেক্টর আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যায় ৬৫ হাজার ৪০০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থরা বলছেন, প্রতিবছরই অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে আকস্মিক বন্যা হলেও তা বেশি স্থায়ী হয়নি। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এবার পানির পরিমাণ আগের চেয়ে বেশি এবং তা বেশি স্থায়ী হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেশি হচ্ছে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক বেশি।তাই এবারের বন্যা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। অনেকেই বলেছেন ‘আটাশির বন্যার চেয়েও এবার ভয়াবহ’।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, নালিতাবাড়ী ভোগাই নদীর পানি বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চেল্লাখালী নদীর পানিও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সেখানে ওয়াটার গেজ উঠে যাওয়ায় সঠিক পরিমাপ জানা সম্ভব হয়নি।
শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত শেরপুর পয়েন্টে ৩৭ মিলিমিটার, নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ১৭০ মিলিমিটার ও নাকঁগাও পয়েন্টে ১০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।এ দিকে নালিতাবাড়ী উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে দুই নারীসহ তিনজন মারা গেছে এবং নিখোঁজ রয়েছে আরও তিন জন।এছাড়া ঝিনাইগাতী সন্ধ্যাকুড়া এলাকা থেকে বন্যার পানিতে ভেসে আসা এক অজ্ঞাতনামার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ঝিনাইগাতী থানার ওসি মো. আল আমীন জানান, বন্যার পানির সঙ্গে উপজেলার সন্ধ্যা কুড়া এলাকায় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির গলিত লাশ ভেসে এলে তা উদ্ধার করা হয়েছে।লাশটি ভারত থেকে ভেসে এসেছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারনা করছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা ও নালিতাবাড়ী থানার ওসি মো. ছানোয়ার হোসেন শনিবার সকালে জানান, নালিতাবাড়ী উপজেলায় শুক্রবার বিকালে বন্যার পানিতে ডুবে খালিসাকুড়া গ্রামে ইদ্রিস আলী নামে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ এবং শুক্রবার রাতে বাঘবের গ্রামের ৪৫ বছর বয়সী আম্বিয়া খাতুন মারা গেছেন।
এছাড়া আরও এক নারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও তার নাম-পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।অন্যদিকে শুক্রবার রাতে নালিতাবাড়ী উপজেলার নামা বাতকুচি গ্রামের মহুয়া খাতুন, অভয়নগর গ্রামের দুইভাই হাতেম আলী ও আলমগীর বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন।
পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারের জন্য কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি সদস্য, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মো. মাহমুদুল হক রুবেল ঝিনাইগাতী উপজেলার ১০টি পয়েন্টে বন্যার্তদের মধ্যে চাল-ডাল, লবণ, তেলসহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রীর প্যাকেট বিতরণ করেছেন।
এছাড়া ঘাটাইল সেনা নিবাস থেকে পর্যাপ্ত স্পিড বোট এনে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। বানভাসী মানুষ উঁচু স্থানে ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান শনিবার সকালে বলেন, “বন্যার্তদের সহায়তার জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণের কাজ চলছে।