আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি: একে একে প্রকাশ্যে আসছে অপকর্ম

বাংলাদেশের জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদি নানা বিতর্কে জড়ানোর পর অবশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। রোববার (২৪ আগস্ট) রাতে বরিশাল মহানগরের বাংলাবাজার এলাকায় সিআইডির বিশেষ অভিযানে তাকে আটক করা হয়। পরদিন সোমবার আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে বিচারক ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

শোবিজ দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ ও গুঞ্জন

তৌহিদ আফ্রিদির নাম বারবার আলোচনায় এসেছে শোবিজ অঙ্গনের সঙ্গেও। বিশেষ করে চিত্রনায়িকা দীঘির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার গুঞ্জন একসময় তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়। ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওতে তাদের রোমান্টিক ভঙ্গিমা নিয়ে চর্চা হলেও দীঘি বারবার দাবি করেন— তারা কেবল ভালো বন্ধু।

এছাড়া তিনি ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা দেবের সঙ্গেও বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে দেব আফ্রিদিকে ‘মামা’ সম্বোধন করেন। দেব নিজেই অফিস ভ্রমণ, কলকাতা ঘোরানো এবং ব্যক্তিগত সময় দেওয়ার বিষয়টি ইউটিউব ভিডিওতে উঠে আসে। এ ঘটনাও তাকে আলোচনায় আনে।

বিয়েকে ঘিরে বিভ্রান্তি ও বুলিং

গত বছর হঠাৎ করেই আফ্রিদির বিয়ের ছবি ভাইরাল হয়। এ সময় রাইসা নামের এক তরুণীকে বিয়ে করেছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। পরে জানা যায়, তিনি বিয়ে করেছেন রাইসার যমজ বোন রিসাকে। এই বিভ্রান্তি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে এবং তার শ্যালিকা রাইসাকে নিয়ে তীব্র ট্রল ও বুলিং শুরু হয়।

গ্রেফতারের পর অপকর্ম প্রকাশ্যে

গ্রেফতারের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নানা অসংগতিপূর্ণ কর্মকাণ্ড নিয়ে একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছেন কনটেন্ট ক্রিয়েটররা। প্রত্যয় হিরণ, স্বপন আহমেদ, সায়েমসহ একাধিক ইউটিউবার অভিযোগ করেন, আফ্রিদি ক্ষমতার প্রভাবে সহকর্মীদের ভয় দেখাতেন, ব্ল্যাকমেইল করতেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করতেন।

কনটেন্ট ক্রিয়েটর সায়েম অভিযোগ করেন, দুই বছর আগে আফ্রিদিকে নিয়ে কনটেন্ট বানানোর কারণে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল, যেখানে ভিডিও কলে যুক্ত ছিলেন আফ্রিদি। অন্যদিকে, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু তানভীর রাহী এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, ক্যামেরার সামনে শান্ত স্বভাবের হলেও ব্যক্তিজীবনে আফ্রিদি ছিলেন ‘ভয়ংকর মানুষ’। তার কথায়— “রাগ উঠলে সে বেল্ট খুলে আমাদের কুকুরের মতো পেটাতো। ইউটিউব ইন্ডাস্ট্রিতে তাকে সবাই বাঘের মতো ভয় পেত।”

হত্যা মামলার আসামি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় তৌহিদ আফ্রিদিকে ১১ নম্বর আসামি করা হয়। এ মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং অজ্ঞাত আরও প্রায় ১৫০ জনকে আসামি করা হয়। একই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পুলিশের সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুনকেও আসামি করা হয়েছে।

এছাড়া আফ্রিদির বাবা ও মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীকেও এই মামলায় গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু

গ্রেফতারের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৌহিদ আফ্রিদিকে নিয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। কেউ কেউ তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ প্রকাশ করছেন, আবার অনেকে বলছেন— আফ্রিদির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো প্রমাণ সাপেক্ষে বিচার হওয়া উচিত।

সব মিলিয়ে, যে তরুণ একসময় কনটেন্ট ক্রিয়েশনের মাধ্যমে তরুণ সমাজে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন, আজ তিনি বিতর্ক ও অপকর্মের অভিযোগে কারাগারের অন্ধকারে।

আরও পড়ুন: