“পিটিআইয়ের চূড়ান্ত বিক্ষোভে স্থবির পাকিস্তান”

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠান ইমরান খান চূড়ান্ত বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন। এ বিক্ষোভকে ভাগ্য নির্ধারণের কর্মসূচি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। কারাগারে থেকে তার ডাক দেওয়া এ কর্মসূচিতে অচল হয়ে পড়েছে পাকিস্তান। রাজধানী ইসলামাবাদে কঠোর লকডাউন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইন্টারনেট ও স্কুল কলেজও বন্ধ করা হয়েছে।

রোববার (২৪ নভেম্বর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকরা মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন। তবে দলটির এ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে রাজধানী ইসলামাবাদকে নিরাপত্তা লকডাউনের আওতায় রাখা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পিটিআইয়ের দেশব্যাপী চূড়ান্ত বিক্ষোভকে সামনে রেখে নিরাপত্তা উদ্বেগপূর্ণ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামাবাদের অভিমুখী মহাসড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামাবাদের বেশিরভাগ প্রধান সড়ক কনটেইনার দিয়ে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া আন্দোলনকারীরা পার্লামেন্টে যাতে পৌঁছাতে না পারে সেজন্য দাঙ্গা পুলিশ ও আধাসামরিক কর্মীদের বিশাল দল মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইনি বিধানের অধীনে যেকোনো ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

পিটিআই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানসহ তার সমস্ত নেতাদের মুক্তি এবং প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে আসছে দলটি।

শনিবার এক ভিডিও বার্তায় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও ইমরান খানের অন্যতম সহযোগী আলী আমিন গন্দাপুর বলেন, আমাদের সব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ইমরান খান আমাদের সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে পিটিআইয়ের বিক্ষোভের কারণে ইসলামাবাদ এবং রাওয়ালপিন্ডি এবং আশপাশের এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির বিষয় উল্লেখ করে ইসলামাবাদ প্রাইভেট স্কুল অ্যাসোসিয়েশন এ সিদ্ধান্ত জােনিয়েছে।

ইসলামাবাদ জেলা প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাজধানীজুড়ে সকল স্কুল ও কলেজগুলোর ক্ষেত্রে এ বিজ্ঞপ্তি কার্যকর হবে।

এর আগে, গত ১৩ নভেম্বর ইমরান খান সারা দেশে বিক্ষোভের জন্য ‘চূড়ান্ত ডাক’ দেন। সেই দিন তিনি ঘোষণা দেন, সবাইকে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে সমবেত হওয়ার। তিনি অভিযোগ করেন, জনগণের ম্যান্ডেট চুরি, মানুষকে অন্যায়ভাবে আটক এবং ২৬তম সংশোধনী পাস করে দেশে ‘একনায়কতান্ত্রিক শাসন’ আরও শক্তিশালী করা হয়েছে।

২০২৩ সালের আগস্টে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর থেকে তার দল তার মুক্তি এবং ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কথিত কারচুপির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে।

এবার দেশবাসীকে অবৈধ নির্বাচন ও সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার জন্য ‘চূড়ান্ত ডাক’ দেন ইমরান খান। তার ডাকে ব্যাপক বিক্ষোভ কর্মসূচির প্রস্ততি নিয়েছে পিটিআই। অপরদিকে দেশজুড়ে এ বিক্ষোভ সমাবেশ দমনের জন্য পুলিশ প্রস্তুতি নিয়েছে। এরকম টান টান উত্তেজনায় দেশটির পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে পাকিস্তান সরকার বিক্ষোভ দমন করতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে এবং কোনো ধরনের সমাবেশ অনুমোদন না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে, ইমরান খানের সমর্থকরা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তারা যে কোনো মূল্যে এই চূড়ান্ত বিক্ষোভ সমাবেশ সফল করবেন। তাদের বিশ্বাস, কোনো বাধাই তাদের থামাতে পারবে না।

সংকলিত_এম-আর-আর

আরও পড়ুন: