ইসরায়েলকে বয়কটের ডাক বিশ্বের হাজারো লেখক-প্রকাশকের

ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের হামলাকে সমর্থন করা অথবা মৌন সমর্থন করা বিশ্বের সব সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে বয়কটের ডাক দিয়ে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ১ হাজারেরও বেশি লেখক ও প্রকাশক।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইসরায়েলকে সমর্থন করা বিশ্বের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বয়কট করার অঙ্গীকার করে বিশ্ববিখ্যাত স্যালি রুনি, অরুন্ধতী রায় এবং র‍্যাচেল কুশনারসহ এক হাজারের বেশি লেখক ও প্রকাশক সম্প্রতি একটি চিঠিতে সই করেছেন। সই করা চিঠি নিয়ে লেখকরা জানান, ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের ওপর অত্যাচারে যেসব সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সহায়তা করেছে অথবা মৌন সমর্থন জানিয়েছে তাদের পুরোপুরি বয়কট করার জন্য অঙ্গীকার করেছেন।

বয়কটের চিঠিতে স্বাক্ষর করা লেখকরা জানান, তারা এমন কোনো ইসরায়েলি আগ্রসনকে সমর্থন করা প্রকাশক, উৎসব, সাহিত্য সংস্থা এবং প্রকাশনার সঙ্গে আর কাজ করবেন না; যারা ফিলিস্তিনিদের অধিকার লঙ্ঘন করছে। যার মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে, হত্যা, নির্যাতন, বৈষম্যমূলক নীতিমালা, দখলদারিত্ব, জাতিগত নিধন ও বিভাজন করার অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়াও যেসব প্রতিষ্ঠান ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার স্বীকার করে না- সেগুলোও বয়কট করা হবে। ইসরায়েলি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বয়কটের উদ্যোগটি পালেস্টাইন সাহিত্য উৎসব (পালফেস্ট) দ্বারা ক্যাম্পেইন হয়েছে, যা ফিলিস্তিনের শহরগুলোতে মুক্ত ইভেন্ট আয়োজন করে।

লেখকদের এ চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা লেখক ও প্রকাশকরা এ চিঠিটি প্রকাশ করছি- কারণ আমরা ২১ শতকের একটি গুরুতর নৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি।’ লেখকরা আরও উল্লেখ করেন, গত অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েল ‘কমপক্ষে ৪৩,৩৬২’ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং এর পেছনে ৭৫ বছরের জাতিগত নিধন, অত্যাচার ও নির্যাতনের ইতিহাস রয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘সংস্কৃতি বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই অন্যায়গুলোকে স্বাভাবিক বা বৈধতা দিতে সাহায্য করে। ইসরায়েলি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের সঙ্গে কাজ করছে এবং ফিলিস্তিনিদের দখল ও নিপীড়নকে ঢাকার চেষ্টা করছে।

এ চিঠির জবাবে ইউকে ল অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট (ইউকেএলএফআই), যা ইসরায়েলকে সমর্থন করে, তারা একটি চিঠি পাঠিয়েছে। তারা অভিযোগ করেছে, ‘লেখকদের এ বয়কট স্পষ্টভাবে ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক।’

অপরদিকে পালফেস্টের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ওমর রবার্ট হ্যামিলটন বলেছেন, ইউকেএলএফআই’র চিঠিকে ‘নৈতিকভাবে দেউলিয়া’ এবং ইসরায়েলের সমর্থকদের কাছে কোনো যুক্তি নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ‘নরমাল পিপল’ ও সর্বশেষ ‘ইন্টারমেজোর’ লেখক স্যালি রুনি দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছেন। ২০২১ সালে তিনি তার তৃতীয় উপন্যাস বিউটিফুল ওয়ার্ল্ড, হোয়্যার আর ইউ’র হিব্রু ভাষায় অনুবাদের স্বত্ব একটি ইসরায়েলি প্রকাশককে বিক্রি করতে অস্বীকার করেন। অরুন্ধতী রায় এবং র‍্যাচেল কুশনারও ইসরায়েলের কঠোর সমালোচক। এই মাসের শুরুর দিকে ‘পেন পিন্টার’ পুরস্কার গ্রহণের সময় রায় গাজার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন এবং জানান, তিনি তার পুরস্কারের অর্থ ফিলিস্তিনি শিশুদের সাহায্য তহবিলে দান করবেন।